৩৬ জুলাই পা হারা বীরদের একাংশ সূচনালগ্নেই পঙ্গু🥲 more

জতীয় বীরদের ছবি।সংগৃহীত৷  

​জুলাই গণঅভ্যুত্থান, যা মূলত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হয়েছিল, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া এই অহিংস আন্দোলন পরবর্তীতে তৎকালীন সরকারের দমন-পীড়নের মুখে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনে অসংখ্য সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ ছাত্রসমাজ, তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং অনেকে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পা হারানো বীরদের কথা:


​জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে অথবা অন্য কোনোভাবে গুরুতর আঘাতের শিকার হয়ে পা হারিয়েছেন, তাদের নির্দিষ্ট করে তালিকাভুক্ত করা কঠিন। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অসংখ্য আন্দোলনকারীকে পুলিশ ও সরকারি দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের গুলির শিকার হতে হয়েছে, যার ফলে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এদের মধ্যে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রী ছিলেন, তেমনি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও ছিলেন।

  • শারীরিক ও মানসিক আঘাত: পা হারানো বা পঙ্গুত্ব বরণ করা ব্যক্তিরা শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষতির শিকার হননি, তারা মারাত্মক মানসিক ট্রমারও সম্মুখীন হয়েছেন। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় তাদের পরিবারেও নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা।
  • চিকিৎসা ও পুনর্বাসন: অনেক আহত ব্যক্তিকে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের প্রয়োজন হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক (BRAC) বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সরবরাহ করে এবং ফলোআপ চিকিৎসাও দিয়ে এই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারি অবহেলা নিয়ে আহতদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে।
  • অব্যাহত সংগ্রাম: পা হারানো এই বীরেরা শুধু তাদের অঙ্গই হারাননি, তারা জীবনের চাকা সচল রাখতে নতুন এক যুদ্ধ শুরু করেছেন। আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় অনেকেই আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

কয়েকজন শহীদ ও আহত বীরের দৃষ্টান্ত:

​যদিও পা হারানো সকলের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা সম্ভব নয়, তবে গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী বা গুরুতর আহত কয়েকজনের কথা উঠে এসেছে:


  • আবু সাঈদ (২২): বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র এবং কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন। তার রক্ত রংপুর সহ সারাদেশে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছিল।
  • সালমান হোসেন: তিতুমীর কলেজের ছাত্র, জুলাই অভ্যুত্থানে পায়ে গুলি লেগে গুরুতর আহত হন। অস্ত্রোপচারের পর দেখা যায় তার একটি পা অন্যটির চেয়ে ছোট হয়ে গেছে, ফলে তার স্বাভাবিক হাঁটাচলার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তিনি গভীর হতাশায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন।
  • আলিফ আহমেদ সিয়াম (১৫): বাগেরহাটের ডেয়ারি ফার্ম হাই স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু তিনি ৫ আগস্ট ২০২৪ এর 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে শহীদ হন। তিনি ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মিছিল চলাকালীন রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসে আহত হয়েছিলেন।

গুরুত্বপূর্ণ দিক:

  • ​জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের 'জাতীয় বীর' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে একটি রুলও জারি করা হয়েছে।
  • ​২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিহতদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে অসংখ্য নাম রয়েছে, তবে পা হারানো আহতদের সুনির্দিষ্ট তালিকা এখনও ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়নি।

​জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এই বীরদের আত্মত্যাগ ও দুর্ভোগ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অংশ। তাদের এই ত্যাগই একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছে, যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস প্রতিফলিত হয়েছে।

https://www.profitableratecpm.com/cty46bne?key=995cf4ff7b6c188a85dfc57b822cbc9c

 

Post a Comment

0 Comments